Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বিভিন্ন শাকসবজির পুষ্টিমান

বিভিন্ন শাকসবজির পুষ্টিমান ‘ নিরাপদ সবজি চাষ, পুষ্টি স্বাস্থ্য বারো মাস’

ড.সুরজিত সাহা রায়
দেহকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখতে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের দেশে সারা বছর বিভিন্ন রকমের শাকসবজি পাওয়া যায়। রবি বা শীত মৌসুমে অধিকাংশ সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০% সবজি এ মৌসুমে হয়। 
শাকসবজি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। এতে মানবদেহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন, প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। বাংলাদেশের শাকসবজির পুষ্টিমানের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি বিভিন্ন পুষ্টি সরবরাহ করে। তাই পারিবারিক পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপদ শাকসবজি আবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের শাকসবজি নির্ভর নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রধান প্রধান শাকসবজির পুষ্টি উপাদান (খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম) উল্লেখ করা হলো-

 

 

শাকসবজির পুষ্টিমান

শরীরের দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শাক সবজিতে দেহের জন্য প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ লবণ ও আঁশ রয়েছে। এসব পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ শাকসবজি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছাড়াও খাদ্যদ্রব্য হজম, পরিপাক ও বিপাকে সহায়তা, শর্করা-আমিষ ও তেলকে ক্যালরিতে (শক্তি) পরিণত করতে, খাবারে রুচি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।


উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ যেমন- মূলা, ডাঁটা, পাতা, ফুল, ফল, বিচি সবই শাকসবজি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। উদ্ভিদের ভক্ষণযোগ্য অংশ অনুসরণে শাকসবজিকে নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণিকরণ করা হয়েছে-


১. পাতাজাতীয় : পালংশাক, লাউশাক, মুলাশাক, লালশাক, বাঁধাকপি, ধনেপাতা, পেঁয়াজপাতা ইত্যাদি।
২. কন্দ বা শিকড় : গাজর, আলু, শালগম, মুলা, ওল, কচু, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি।
৩. ফুলজাতীয় : ফুলকপি, শাপলা।
৪. ফলজাতীয় : লাউ, ঝিঙা, শসা, টমেটো ইত্যাদি।
৫. শুঁিট ও বীচিজাতীয় : শিম, মটরশুঁটি, বরবটি ইত্যাদি।
শাকসবজিতে পানি, শর্করা, সেলুলোজ, পেকটিন, খনিজ উপাদান, ভিটামিন কম-বেশি পরিমাণে থাকে। তবে শাকসবজির কোষে নিম্নলিখিত উপাদানগুলোও থাকে।
১. উদ্ভিদ কোষের প্রাচীর সেলুলোজ দিয়ে তৈরি। এর ফলে কোষ প্রাচীর কঠিন ও অস্থিতিস্থাপক হয়। প্রাচীরে হেমিসেলুলোজও থাকে।
২. প্রাচীরের নিচে পেকটিন জাতীয় শর্করা থাকে যা আঠার মতো কাজ করে এবং সবজির খোসাকে ভেতরের অংশে আটকে রাখে। সবজি পরিপক্ব হলে পেকটিন দ্রবীভূত হয় এবং খোসা ঢিলে হয়ে পড়ে।
৩. প্রাচীরের ভেতর Protoplasmic Membrane থাকে যা Protoplasm-কে ধরে রাখে। এতে Plastids ও থাকে, যাতে ওই শাকসবজির রঞ্জক পদার্থ অবস্থান করে। এগুলো হচ্ছে-
ক. কেøারোপ্লাস্টস- এতে সবুজ রঞ্জক পদার্থ কেøারোফিল থাকে। পাতায় এই পদার্থ বেশি থাকে।
খ. ক্রোমোপ্লাস্টস- এতে পানিতে অদ্রবণীয় হলুদ, কমলা বর্ণের ক্যারোটিন থাকে যেমন- মিষ্টিকুমড়া, গাজর ইত্যাদি।
৪. লিউকোপ্লাস্টস-বর্ণহীন, এতে এ্যানথোসায়ানিন ও ফ্লেভোনস জাতীয় বর্ণহীন উপাদান থাকে যেমন আলু, শালগম, মুলা ইত্যাদি। এ্যানথোসায়ানিন অবশ্য লাল, বেগুনি রঞ্জক পদার্থের উপাদান, যেমন-বীট, লালশাক, বাধাঁকপি ইত্যাদিতে থাকে।
৫. কোষের ভেতর বেশির ভাগ জায়গাজুড়ে Vacuoles থাকে যাতে সেলুলোজ, কিছু প্রোটিন ও চর্বির মিশ্রণ থাকে।
বেশির ভাগ শাকসবজিতে পানির পরিমাণ বেশি (>৮০ শতাংশ) এবং প্রোটিন ২-৩ শতাংশ। বিচি, শিম-এ প্রেটিন বেশি থাকে। কন্দ ও মূলজাতীয় সবজিতে শ্বেতসার প্রচুর থাকে। ডাঁটা, পাতায়, সবজির খোসায় সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, পেকটিন, গাম থাকে যা সবজির কাঠিন্য ও আকার ঠিক রাখে। এছাড়াও কিছু এনজাইম  ও inhibitors থাকে।


সবুজপাতায়, পালংশাকে, বিট, সবুজ বীজে oxalic acid থাকে। খনিজ উপাদানের মধ্যে K, Ca, Fe, Na ইত্যাদি থাকে লবণরূপে যেমন phosphates, chlorides, carbonates ইত্যাদি। Phenolic যৌগ hydroxyl acids, flavones সবজিতে থাকে। সালফারজাতীয় যৌগের জন্য সবজিতে বিশেষ ধরনের গন্ধ পাওয়া যায়। আলুতে 2-isopropyl-3-me thoxypyrazine, বাঁধাকপিতে dimethyl sulfide, পেঁয়াজে thriopropanal-s-oxide অথবা এদের মিশ্রিত যৌগ থাকে। পেঁয়াজ, বাঁধাকপি, মুলা, সরিষা প্রভৃতিতে উদ্বায়ী সালফার যৌগ থাকে যার গন্ধ রান্নার সময় ছড়িয়ে পড়ে। গ্লাইকোসাইড জাতীয় উপাদানের জন্য করলা, লেবুর খোসা তেতো লাগে।


উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ হতে সবুজশাক পাতায় খাদ্য উপাদান বেশি থাকে। ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফলিকএসিড, ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে প্রভৃতি ভালো পরিমাণ থাকে। গাঢ় সবুজ রঙের পাতায় এই সকল উপাদান হালকা সবুজপাতা হতে বেশি পরিমাণে থাকে। ভিটামিন-সি এর জন্য শাকপাতায় লৌহের শোষণ সম্ভব হয়। সবুজ, হলুদ, শাকসবজির প্রধান অবদান হচ্ছে ক্যারোটিন। ক্যারোটিন দেহে ভিটামিন ‘এ’-তে রূপান্তরিত হয়। শাকপাতায় ভিটামিন-সি এবং ফলিকএসিড থাকে, যা শস্যে এবং ডালে কম থাকে। তাই শাকসবজি ডাল ভাতের পরিপূরক।


মূল ও কন্দ জাতীয় খাদ্য উদ্ভিদের পুষ্টিভাণ্ডার; বিশেষ করে আলু, কচু, মিষ্টিআলু প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার জমা থাকে। পৃথিবীর বহু দেশে আলু প্রধান শক্তিদানকারী খাদ্যরূপে গ্রহণ করা হয়। নতুন আলুতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। পুরনো আলুর শ্বেতসার বিশ্লেষিত হয়ে মালটোজ ও কিছ গ্লুকোজ উৎপন্ন করে। এ কারণে পুরানো আলু, নতুন আলুর অপেক্ষা স্বাদে মিষ্টি। আলুতে ২%-এর মতো প্রোটিন থাকে, কিন্তু এই প্রোটিন উচ্চ জৈব মানের। নতুন আলুতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৫-৩০ মিগ্রা. পর্যন্ত ভিটামিন‘সি’ থাকে। আলু পটাশিয়ামের ভালো উৎস। অন্যান্য পুষ্টি উপাদান, যেমন- ক্যালসিয়াম, লৌহ, বি-ভিটামিন কম পরিমাণে থাকে। আলুর খোসার নিচেই প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে, তাই খোসা সমেত আলু সিদ্ধ করা হলে, এসকল পুষ্টি উপাদানের অপচয় কম হয়।


বিভিন্ন প্রকার ফল সবজিতে শ্বেতসার, ভিটামিন ও খনিজলবণ থাকে। রঙিনসবজি, যেমন- গাজর, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো প্রভৃতিতে উল্লেখযোগ্য পরিমান ক্যারোটিন থাকে। কাঁচামরিচ, টমেটো, বাঁধাকপি, ভিটামিন-সি এর ভালো উৎস। সব সবজিতে ভালো পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। শাকসবজিতে পানির পরিমাণ বেশি বলে প্রোটিন ও শক্তিমূল্য কমে যায়। এজন্য লাউ, শশা, ঝিঙা প্রভৃতি সবজির ক্যালরি ও প্রোটিনের মান খুবই কম।


বাংলাদেশের জাতীয়খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা-২০১৫ অনুযায়ী দৈনিক অন্তত ১০০ গ্রাম বা ১ আটিশাক এবং ২০০ গ্রাম বা ২ কাপ সবজি গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু Income & Expenditure Survey (HIES)-2016 এর তথ্যানুযায়ী একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক গড়ে ১৬৭.৩০ গ্রাম সবজি গ্রহণ করে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব অল্প। যদিও বিগত দশ বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে দৈনিক সবজি গ্রহণের প্রবণতা খুব বেশি বৃদ্ধি পায় নাই।  HIES-2005 এবং HIES-2010 এর তথ্যানুযায়ী দৈনিক সবজি গ্রহণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৫৭.০০ এবং ১৬৬.০৮ গ্রাম। পৃথিবীর আর কোনো দেশের মানুষ সম্ভবত এত কম পরিমাণ শাকসবজি খায় না। সাধারণত আমাদের খাদ্য তালিকায় ভাত জনপ্রিয়তার শীর্ষে, সেই তুলনায় শাকসবজির গ্রহণের চাহিদা একেবারেই কম।


বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক চাহিদানুযায়ী শাকসবজি গ্রহণের ফলে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনী রোগ, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।   শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশও থাকে, যা মলাশয়ের ক্যান্সার, মূত্রনালীর পাথর, ডায়াবেটিস, স্থুলকায়ত্ব, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগপ্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে দেহকে সুস্থ ও সতেজ রাখে। এছাড়াও শাকসবজিতে বিদ্যমান আঁশগ্রহণকৃত খাদ্য দ্রবের মধ্যস্থিত অতিরিক্ত কোলেস্টেরল/চর্বিসহ অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিকের সাথে যৌগ তৈরি করে শরীর থেকে নিষ্কাশন করার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। শাকসবজিতে বিদ্যমান ভিটামিন ই, সি এবং বিটাক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন-প্রস্টেট, ওভারিয়ান, স্তন এবং বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।


শিশুদের অপুষ্টিজনিত রাতকানা, অন্ধত্ব, রিকেট, বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ, স্কার্ভি, মুখ ও ঠোঁটের কোণে ঘা, রক্তশূন্যতা দূরীকরণেও শাকসবজি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

 

ফারজানা রহমান ভূঞা

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফলিতপুষ্টি ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান), মোবাইল নং: ০১৮৩২-২৭২১৪২ ইমেইল: farjanarb@yahoo.com

 

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon